অনুপমাদের বাড়ির অবস্থা তেমন ভালো ন্য়,আবার অতি দরিদ্রও নয়। বলা যায় মধ্যবিত্ত। পূবাল হাওয়ার মতো কখনো দিন ভালো যায় কখনো আবার টেনেটুনে চলে।অনুপমা সদ্য কিশোরি। কচিফুলের উপর সপ্তরঙ্গা প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতে থাকে।ওর সবচেয়ে সুন্দর বস্তু ছিলো ওর দুটি চোখ।কুচকুচে গভীর কালো আর স্বাভাবিকের চেয়ে একটু প্রশস্ত নেত্রখানিতে সব সময় বসন্ত লেগেই থাকে।কিশোরি দেহে চোখ দুটি যেন অনেক অস্থির। প্রবল চাঞ্চল্যতার উদরগত এ কিশোরি কর্মপটু ছিলো।এর সাথে ধর্মও ভালো জানতো। তবুও কম বয়স বলে কথা,কখনো কখনো কাজ আর ধর্ম কোনটাই সে মানতো না।তখম উদয় হতো ইচ্ছা ধর্ম।ইচ্ছা ধর্ম মানে হলো যা মনে চায় তাই করা। আটকুড়া স্বভাবের জন্য ও মাঝে মাঝে মার হাতে উত্তমমধ্যম খেতে হতো।তাতে অবশ্য বিশেষ কিছু হতোনা,বরং ধরনী যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলতে থাকতো।একদিন গাঁয়ের কিশোর দলকে নিয়ে বিলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়েছিলো অনুপমা। পানি অল্প আর ভীষণ ঘোলা।এতো পানি দেখে কিশোরের দল লম্ভা গলার রাজহাসের মতো আর কিশোরিটি লম্ভা গলার রাজহংসীর মতো হাওয়ায় উড়ে পানিতে লাফিয়ে পড়লো।সে কি ছোটাছোটি না দেখলে বুঝানো যাবেনা।এভাবে ঘন্টা চারেক চলে গিয়েছিলো।কিন্তু যা ধরবার জন্য এ কিশোর কিশোরির দলটি এসেছিলো তার কিছুই তারা ধরলোনা।বলতে গেলে ধরতে পারলোনা। অন্যথায় আর বৃথা চেষ্টা না করে বাড়িতে ফিরার সিদ্বান্ত নিলো ওরা।এদিকে অনুপমার মা অক্লান্ত ব্যস্ততায় কিশোরিটিকে গ্রামভর খুঁজে বেড়াচ্ছে।যখন তালতলা, বাশের ঝুপ,কিংবা বনবাদাড়ে কোথাও খুজে পাওয়া গেলোনা, তখন মধ্যবয়সী এই রমণীটির বুঝতে আর বাঁকি রইলোনা যে, বালকের দলের সাথে সে বিলের পানিতে লুকোচুরি খেলছে। কিছুহ্মনের মধ্যেই সে বিলের কাঁদামাখা জমিতে দাঁড়িয়ে হাক ছাড়লো,"কইলো অনু, সারা দিন পানির মধ্যে খেলা করছিস? তবুও সে অনুপমাকে দেখলো না। বালকের দল এমনভাবে বালিকাটিকে ঘিরে রেখেছিলো যে এখানে কোন মেয়ে থাকতে পারে তা কল্পনা করাই কঠিন ব্যাপার।তবু রমণীটির বিকট চ্যাঁচামেচিতে বালক দলের ব্যুহ ভেঙ্গে গেলো। সবাই এদিক ওদিক ছুটে পালালো। শুধু গলা পানিতে অপরাধীর মতো দাড়িয়ে রইলো অনুপমা।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন